জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটের চেয়ারম্যানসহ তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব -১১। বুধবার ১১ মার্চ ঢাকার মোহাম্মদপুর হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান মোঃ জিয়াউল আমিন @ হারুন-অর-রশিদ (৫৩) এবং অর্থ সচিব তার স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছা(৪২)। অভিযানের সময় প্রতারণা ও হয়রানির কাজে ব্যবহৃত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সীলসহ মোট ৪২টি ভুয়া সীল ও বিপুল পরিমান জাল/উদ্দেশ্য প্রণোদিত নথিপত্র, ০১টি লোহার চাকু ও ০১টি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন র্যাব -১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন। তিনি জানান মোঃ জিয়াউল আমিন @ হারুন-অর-রশিদ ও তার স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছার বাড়ী বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানাধীন কালমেঘা এলাকায়। জিয়াউল আমিন ১৯৮২ সালে পাথরঘাটা কেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। সে ২০০৭ সালে বরগুনা, পাথরঘাটায় একটি হত্যা সংঘঠিত করে পালিয়ে ঢাকায় এসে হারুন-অর-রশিদ থেকে জিয়াউল আমিন নাম ধারণ করে। এরপর কিছু উকিলের সাথে কোর্টে কাজ করার সুবাদে সে আইনী কিছু বিষয় রপ্ত করে ২০১১ সালে ‘জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি’ নামে একটি এনজিও শুরু করে। এই এনজিও’র মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রতারিত করলে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে এর লাইসে›স বাতিল করে দেয়। কিন্তু লাইসে›স বাতিল করলেও জিয়াউল আমিন মানবাধিকার ইউনিটির নামে তার প্রতারণার কাজ অব্যাহত রাখে।
তিনি আরো জানান ,এসএসসি পাশ জিয়াউল আমিন একাধারে মানবাধিকার ইউনিটির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল এর চীফ কো-অর্ডিনেটর ও হিউম্যান রাইট্স রিভিউ সোসাইটি এর চীফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে আসছে। এছাড়াও সে মানবাধিকার ইউনিটি নামক অবৈধ সংস্থার চেয়ারম্যানের ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে ছদ্মবেশ ধারন করে বেকার যুব সমাজকে চাকুরীর প্রলোভন, জায়গাজমি ও বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা মেটানোর নামে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। জিয়াউল আমিন @ হারুন-অর-রশিদ ২০০৭ সালে বরগুনা জেলার পাথরঘাটার চ্যাঞ্চল্যকর দেবরঞ্জন কির্ত্তনীয়া হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামী।
জিয়াউল আমিন এই জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি কমিটি তৈরি করে প্রায় ২ হাজার কর্মী নিয়োগ করে যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা সদস্য ফি হিসেবে নিয়েছে। জিয়াউল আমিনের প্রধান কাজ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অন্যায় তদবীর করা। এই তদবীরে কোন কর্মকর্তা অস্বীকৃতি জানালে তার নামে বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ অফিস ও মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করত। জিয়াউল আমিন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে । এছাড়াও একাধিক মহিলাসহ তার নির্ধারিত কিছু এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরীহ জনগণের নামে মনগড়া মামলা ও অভিযোগ দায়ের করে । তার এই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংস্থাগুলির অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হয়। র্যাব-১১ এর অনুসন্ধানে জিয়াউল আমিন @ হারুন-অর-রশিদ এর কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন শতাধিক ভুক্তভোগীকে পাওয়া গেছে। কোন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা করলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিত, এর ফলে ভুক্তভোগীরা মামলা বা অভিযোগ করার সাহস পেত না।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জিয়াউল আমিন আরো স্বীকার তার স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছা সংগঠনটির অর্থ সচিব হিসেবে জিয়াউল আমিন এর অপকর্মের একান্ত সহযোগী। জিয়াউল আমিন @ হারুন-অর-রশিদ ও তার স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছার বিরুদ্ধে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা পায়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।